জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন তালতলী বাজারের বস্তির এক তালাবদ্ধ ঘর থেকে দুলাল হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বেলা ১১ টা থেকে পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় অর্ধগলিত অবস্থায় ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট টিম ও থানা পুলিশ। এ বিষয়ে এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত দুলাল হোসেন (৩৫) দিনাজপুর জেলার বাংলা হিলির (হাকিমপুর) উপজেলার রাজধানী মোড় এলাকার বাসিন্দা তিনি ভারত থেকে (স্মাগলিং) কালোবাজারির মাধ্যমে ভারতীয় জিরা এনে আক্কেলপুরে খুচরা ব্যবসা করছিলেন বলে ঘরের মালিক ও তার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীর সূত্রে জানা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,আক্কেলপুর পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্বপাশে রেলওয়ের জায়গায় গড়ে তোলা ফজলুর রহমানের বস্তির একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন নিহত দুলাল হোসেন।
তার সাথে ওই ঘরে মাঝে মধ্যে সর্ম্পকে ১৭-১৮ বছরের এক অজ্ঞাত ভাতিজা থাকতেন গত রবিবার তারা একই সাথে ছিলেন এরপর থেকে তার ওই ভাতিজার কোন দেখা যায়নি। আরও নিহত দুলাল প্রতিদিন সকালে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা তিতুমীর আন্তঃনগর ট্রেনে উঠে হিলিতে যেতেন আবার রাতে চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে ভারতীয় জিরা নিয়ে ওই ঘরে এসে থাকতেন।
মঙ্গলবার সকালে ওই বস্তির ঘরের মালিক ফজলুর রহমান দুলাল হোসেন কে দুইদিন না দেখতে পেয়ে ফজলুর রহমান তার ঘরের দরজায় গিয়ে তালা ঝুলানো দেখতে পান এবং ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে তিনি ঘরের পিছনের জানালায় দিয়ে তিনি তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুলালের ওই ঘরের দরজার বাহির থেকে তালাবদ্ধ এবং পিছনের জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে একটি অর্ধগলিত দুর্গন্ধ মরদেহের মুখের উপরে বালিশ দেখতে পেয়ে। জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানালে দুপুরে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোসফেকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘরের মালিকসহ আশপাশের বসবাসরতদের তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তিনি যাওয়ায় কিছুক্ষণ পরে আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলায় ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট টিমকে খবর দেওয়া হলে তারা বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় পৌঁছে ঘরের তালা ভেঙ্গে তার দুলাল হোসেনে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠান।
ওই বস্তির ঘরের মালিক ফজলুর রহমান জানান,গত রবিবার রাতে দুলালের পাশের ঘরে থাকা ভাড়াটিয়ারা আমাকে জানান দুলালের ঘরে ভিতরে চিৎকার ও মারামারির শব্দ শুনতে পেয়ে তারা আমাকে দুই ঘন্টা পর জানাই।
তখন আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি দুইদিন পর ভাড়ার টাকার জন্য ঘরের সামনে গিয়ে দেখি দরজায় তালা লাগানো রয়েছে কিন্তু ঘর থেকে দুর্গন্ধ আসছে এরপর আমি পিছনের জানালায় গিয়ে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খরব দেই।
নিহত দুলালের সাথে ব্যবসা করতেন পাশের গ্রাম চুড়িপট্টি গ্রামের বাসিন্দা পারুল বেগম (৩৫) জানান, আমার সাথে দুলাল ভারতীয় জিরা ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে দুলাল আমার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন।
সেই টাকা নিতে আমি এর আগে এসেছিলাম দুলালের কাছে। মঙ্গলবার সকালে আবারো টাকা নিতে এসে দেখি দুলালের ঘরে তালা লাগলো রয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের আইনি আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান ওই ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান পল্টু।
ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দীক জানান,খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি দুলালের ঘরের দরজার বাহিরে তালা ঝুলানো।
এরপর ঘরের পিছনের জানালা দিয়ে ভেতরে দেখা যায় দুলালের দুর্গন্ধ মরদেহ ফুলে উঠেছে। তার মুখের উপরে একটি বালিশ রাখা হয়েছে। বিষয়টি গভীর তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট টিমকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান এই হত্যা কাণ্ডের বিষয়ে ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট টিমের পাশাপাশি আক্কেলপুর থানা পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।